ইসলামের দৃষ্টিতে মিলাদ শরীফের গুরুত্ব
হযরত আবু দারদা (রাঃ) বর্ণনা করেন,“একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) হযরত আবু আমের আনসারী (রাঃ) এঁর গৃহে প্রবেশ করে দেখতে পেলেন যে, হযরত আবু আমের আনসারী (রাঃ) তাঁর নিজ সন্তানাদি সহ অন্যান্য আত্মীয় স্বজনকে একত্রিত করে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এঁর মিলাদ শরীফ (জন্মবৃত্তান্ত) বিবরণী আলোচনা করছেন। এটা দেখে হযরত রাসূলুল্লাহ্(সাঃ) অত্যন্ত খুশী হলেন এবং বললেন,“হে আমের ! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তোমার জন্য তাঁর রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করেছেন এবং সকল ফেরেশতাগণ তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন আর যারা তোমার ন্যায় এরূপ আমল করবে তারাও তোমার ন্যায় নাজাত পাবে।”
……হাকীকতে মোহাম্মাদী পৃষ্ঠা ২৬৩।
একদিন হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) সেখানকার সকল লোকদের নিজ ঘরে একত্রিত করে আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) এঁর মিলাদ শরীফ বা (জন্মবৃত্তান্ত) আলোচনা করেনযা শুনে উপস্থিত সকলেই রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এঁর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করেন। এমন সময় আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) সেখানে উপস্থিত হলেন এবং সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন,“তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।”
রাসূলে করীম (সাঃ) বিভিন্ন সময়ে তাঁর শানে রচিত হযরত হাস্সান বিন সাবিত (রাঃ)ও হযরত কা’ব (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণের ক্বাসীদা শুনে তাঁদেরকে বিভিন্ন সময়ে পুরষ্কৃত করেছেন এবং হযরত হাস্সান বিন সাবিত (রাঃ) এঁর জন্য মসজিদে নববীতে একটি মিম্বর তৈরী করিয়ে দেন।
মিলাদ শরীফ সম্পর্কে আমীরুল মোমেনীন হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রাঃ)
বলেন,“যে ব্যক্তি হুজুর (সাঃ) এঁর মিলাদুন্নবী অর্থাৎ মিলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।
আমীরুল মোমেনীন হযরত উমর ফারুক (রাঃ) বলেন,“যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী (সাঃ) অথবা বেলাদত দিবসকে বিশেষ মর্যাদা দিল সে মূলত ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করল।”
আমীরুল মোমেনীন হযরত উসমান জিন্নুরাইন (রাঃ),“ যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করল সে যেন বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরিক থাকল।”
আমীরুল মোমেনীন ইমামুল আরেফীন হযরত আলী (কঃ) বলেন, “ যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী (সাঃ) প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করল সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
হযরত হাসান বসরী (রাঃ) বলেন, “ আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বণ ’থাকতো তাহলে তা মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে ব্যয় করতাম।”
হযরত ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, “যে ব্যক্তি মিলাদ শরীফ পাঠ বা মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদ্যাপন উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করল এবং খাদ্য তৈরি করল ও জায়গা নির্দিষ্ট করল এবং মিলাদ শরীফ পাঠের জন্য উত্তম ভাবে আমল করল তাহলে সে ব্যক্তিকে আল্লাহ্ পাক হাসরের দিন সিদ্দীক, শহীদ, সালেহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং তার ঠিকানা হবে জান্নাতুন নাঈমে।”
সুলতানুল আরেফীন হযরত জুনাইদ বাগদাদী (রহঃ) বলেন,“ যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী (সাঃ) আয়োজনে উপস্থিত হল এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করল সে তার ঈমান দ্বারা সাফল্য লাভ করবে অর্থাৎ সে বেহেশতি হবে।”
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী (রহ.) বলেন,“যে কোন ঘরে বা মসজিদে অথবা মহল্লায় মিলাদ শরীফ পাঠ করা হয় বা মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদ্যাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ্ তায়ালা এবং ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর ফেরেশতারা সে স্থানের অধিবাসীদের উপর সালাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আল্লাহ্ পাক তাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশতা হযরত জিব্রাইল (আঃ), হযরত মিকাইল (আঃ), হযরত ইসরাফিল (আঃ) ও হযরত আযরাইল (আঃ) মিলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর সালাত-সালাম পাঠ করেন।”
শায়্খ হযরত আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রহ.) ফিকাহ-র কিতাবে লেখেন,“
যে ব্যক্তি তার সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ)কে সম্মান করল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে সম্মানিত করা হবে।”
সুলতানুল আউলিয়া গাউসুল আযম হজরত শায়খ্ সাইয়্যেদ
বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রাঃ) এঁর অমীয় বাণীঃ
১। আমি জীলান দেশের অধিবাসী , আমার নাম মহীউদ্দীন,পাহাড়ের চূড়ায় আমার ঝান্ডা স্থাপিত, (অর্থাৎ আমার ক্ষমত সর্বোচ্চ)।
২। হে মানবগণ ! তোমরা দরূদ পাঠ কর , বিশেষতঃ শ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত রাসুল করীম (সাঃ) এঁর উপর।
৩। আমি বিদ্যা শিক্ষা করিয়া কুতুব হইয়াছি এবং খোদার নিকট হইতে সৌভাগ্য লাভ করিয়াছি।
৪। আল্লাহ্তায়ালা আমাকে গুপ্ত রহস্য সম্বন্ধে অবগত করিয়াছেন, আমায় গলার হার পরাইয়াছেন ( মর্যাদা বৃদ্ধি করিয়াছেন ) এবং আমি যাহা চাহিয়াছি তাহা দিয়াছেন।
৫। হে আমার মুরীদগণ ! তোমাদের কোন ভয় নাই , আল্লাহ্ তায়ালা আমার রব , তিনি আমাকে উচ্চ সম্মান দান করিয়াছেন এবং আমার মনোবাসনা পূর্ণ করিয়া দিয়াছেন।
৬। প্রত্যেক আপদে বিপদে আমাকে উসিলা কর, আমি তোমার সমস্ত কাজে আমার শক্তি দ্বারা সাহায্য করিব।
৭। হে আমার মুরীদগণ ! আমার ওয়াদা পালন করিও ( মুরীদ হওয়ার সময় যে সকল ওয়াদা আমার সাথে
করিয়াছ তাহা পালন করিও ) তাহা হইলে কেয়ামতের দিন মিযানের নিকট আমাকে উপস্থিত পাইবে (সাহায্য করিতে ) ।
৮। যদি তোমার নেকীর পাল্লা হাল্কা হইয়া যায় কসম খোদার আমি তজ্জন্য জামিন আছি। হাকীকতের দৃষ্টিতে আমার নিকট অনুগ্রহ পাইবে।
৯। হে আমার মুরীদগণ ! আমাকে আঁকড়াইয়া ধর এবং আমাকে বিশ্বাস কর তবেই আমি তোমাকে দুনিয়া ও কেয়ামতের দিনে সাহায্য করিব।
১০। হে আমার মুরীদগণ ! তোমরা যদি আমার হুকুম মত চল , তোমাদিগের জন্য খোশ খবর মজুদ রহিয়াছে। যদি তোমরা কোন কষ্টে পতিত হও , তবে আমার শক্তিতে মুক্তি পাইবে।
১১। আমি আমার মুরীদগণের নেগাবান আছি এবং তাহাদের সকল কাজকর্মে ও দুঃখ-কষ্টে সাহায্য করিতেছি।
১২। প্রকৃতপক্ষে আমি সমস্ত কুতুবের কুতুব এবং সমস্ত কুতুবের উপর আমর আদেশ ও মর্যাদা প্রবল।
১৩। সচ্চরিত্র বা সৎ লোককে কখনো কষ্ট দিও না।
১৪। মৃত্যুর পর সুখী হওয়ার জন্য সর্বদা সাধু সঙ্গ অর্থাৎ আল্লাহর প্রিয়জনের সঙ্গ লাভ করিও ।
১৫। জ্ঞানবান ও বিদ্বান লোকদিগকে ভক্তি ও সম্মান করিও।
১৬। যে সকল জ্ঞানী ও সাধুলোক দ্বারা ইহকাল ও পরকালের সকল উদ্দেশ্য সফল হইবে মনে কর ক্ষতি হইলেও তাহাদের সঙ্গলাভ ত্যাগ করিওনা।
১৭। তিনি ফরমাইয়াছেন – যে কেহ আমাকে মিথ্যা জানিবে তাহার ঈমান , দুনিয়া ও আখেরাত নষ্ট হইবে। যেমন – তীব্র বিষপান করা মাত্রই প্রাণহীন হয় । আমি তোমাদিগকে আল্লাহ্ পাকের জাতের ভয় প্রদর্শন করিতেছি।